বিভিন্ন অ্যাপস ও গেমস থেকে আয় আসলে কতটা যৌক্তিক



বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক সমস্যার একটা হলো বেকার সমস্যা। বেকার সমস্যার পাশপাশি অনেকেই আছেন যারা স্বাধীনভাবে উপার্জন করতে চান, অর্থাৎ দশটা-পাঁচটার চাকরি করতে চান না, কেউ কেউ চান ঘরে বসে উপার্জন করতে, বিশেষ করে অনলাইনে।

অনলাইনে উপার্জনের অনেক উপায় আছে। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ফ্রিল্যান্সিং করা, যেটা করার জন্য আপনাকে কাজ শিখতে হবে, যেমন ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আর্টিকেলস রাইটিং এর দক্ষতা সহ আরও অনেক কাজ। যেগুলো প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করা উচিত।

এর বাইরে ইউটিউব, ব্লগিং, যেগুলোতে কাজ করতে হলে অনেক ধৈর্য্য থাকতে হবে, তৈরী করতে হবে মানসম্মত কন্টেন্ট। 

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে অনেকেই আছে যারা এই পরিশ্রমের কাজগুলোর কোনটাই করতে চান না। তারা এমন কিছু করতে চান যেটায় তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। এরকম চিন্তাভাবনা থেকেই আপনি হয়তো ঢুঁ মারেন ইউটিউবে এবং ইউটিউবে গেলে এরকম অনেক ভিডিও পাওয়া যায় যারা খুব সহজে এক দিনে ২০০ ডলার আর্নিং এর পথ বাতলে দেবে, দেখাবে কীভাবে গেমস খেলে সহজেই উপার্জন করা যায় কিংবা কিছু টাকা ইনভেস্ট করে বসে বসেই কয়েকদিনের মধ্যে বড়লোক হবার পন্থা।

অনেকেই এসব দেখার সাথে সাথে চলে যান সেসব সাইটে বা অ্যাপ এ, খুলে ফেলেন আইডি এবং শুরু করে দেন কাজ। এবং একসময় বুঝতে পারেন যে আপনি সময় নষ্ট করে ফেলেছেন, এ থেকে আপনার কোন আয় হবে না। 

প্রথমত যেসকল ইউটিউব চ্যানেলে এসব ভিডিও দেখায় তারা কেবল ভিউ পাবার জন্য এবং সেসব ভিডিও থেকে উপার্জনের জন্য এসব ভিডিও আপলোড দেয়। তাছাড়া এধরনের অ্যাপ এ তাদের রেফারেল কোড দিয়ে দেয়, সেসব রেফার থেকে তারা এককালীন একটা আয় করে নেয়।

এবার আসি এসকল অ্যাপ থেকে আয় না হবার প্রধান কারনগুলোতে।

শুরুতে যেসকল ভিডিও বানানো হয় সেখানে দেখানো হয় বিকাশ থেকে ক্যাশ আউট, কিন্তু লগইন করার পর বোঝা যায় পেপাল বা ফোন রিচার্জ ছাড়া সম্ভব নয়। সেটাও দশ বা বিশ ডলারের নিচে নয়। এবং ভিডিও গুলোতে খুব সহজ সহজ কিছু টাস্ক দেখায়। যেটা করার সাথে সাথে আপনি একটা এমাউন্ট উপার্জন করবেন এবং সাথে সাথে ক্যাশ আউট করতে পারবেন। কিন্তু আসলে এরকম কিছুই হয় না। 

ধরা যাক ক্লিপস ক্ল্যাপস গেমের কথা। যেটা পেপাল বা মোবাইল রিচার্জ এর মাধ্যমে পেমেন্ট করে। শুরুতে লগইন করার পরে বিভিন্ন টাস্ক থেকে মাত্র কিছু সময়ের মধ্যেই আপনি ২-৩ ডলার উপার্জন করে ফেলবেন। আপনার মনে হবে আপনি হয়ত এভাবেই আয় করবেন। কিন্তু কিছুদিন গেলে দেখা যাবে দিনে এক সেন্টও আয় করতে পারছেন না, করতে হলেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এবং সেই দশ ডলারের কোটা পূরণ করতে গিয়ে আপনার না হলেও চার-পাঁচ মাস লেগে যাবে। সেই পাঁচ মাস পরেও যে আপনি টাকা ক্যাশ আউট করতে পারবেন তাও না। দেখা যাবে শেষ সময়ে গিয়ে আপনার আইডিটি কোন একটা কারন দেখিয়ে ব্লক করে দিয়েছে।

এই একই সমস্যা হয় অধিকাংশ ইনভেস্টমেন্টের অ্যাপ থেকে। তারা প্রলোভন দেখিয়ে অনেক অনেক ইনভেস্ট করিয়ে নেয়, একজন দুইজন কে তারা পেমেন্ট করেও। তারপর যদি হাজার খানেক মানুষের কাছ থেকেও তারা দুই ডলার করে নেয় তাহলেও খুব অল্প সময়ে দুই হাজার ডলার আয় করে ফেলে। তারপর সেই অ্যাপ টি ভোল পালটে অন্য অ্যাপ হিসেবে মানুষের কাছে আসে এবং আরও অনেকে সেই ফাঁদে পা দেয়। যার দরুন অনেকেই হয়ে যান হতাশ।

তাই কেউ যদি অনলাইন থেকে আয় করতে চান তাহলে সঠিক গাইডেন্সের অধীনে গিয়ে কাজ শুরু করুন। ইনভেস্ট করতে হলে অফলাইনে ইনভেস্ট করুন, কাজ শিখুন, তারপর ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করতে থাকুন, তাহলেই দেখবেন একদিন আপনি আপনার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌছাতে পেরেছেন।


[অনলাইনে এরকম নানা রকম আয়ের উৎস ও সেসবের ধোঁকা দেওয়া নিয়ে লিখতে এবং অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে কী কী করনীয় ও কী কী করনীয় নয় সেসব নিয়ে আপনিও লিখে ফেলুন আমাদের ব্লগে, শেয়ার করুন নিজের অভিজ্ঞতা। সংক্ষিপ্ত হলে কমেন্টের মাধ্যমে জানান আর বড় হলে আমাদের মেইল করুন এই ঠিকানায়ঃ shilpokarkhana@gmail.com ]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ