অঞ্জন দত্ত যখন পরিচালক

গায়ক অঞ্জন দত্ত কে আমরা
অঞ্জন দত্ত

কমবেশী সবাই চিনি-জানি, কিন্তু এটা কি  জানি অঞ্জন দত্ত শুরুতে
একজন অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন! অনেকের চোখেই অঞ্জন দত্ত উপমহাদেশের একজন অন্যতম সেরা অভিনেতা। অভিনয় জীবনের শুরু হয়েছিল মৃনাল সেনের হাত ধরে। তবে অভিনয়ে কখনই নিয়মিত ছিলেন না। এখন পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ টির মত সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন গান। নিজেই গান লিখেছেন, সুর করেছেন, গেয়েছেন, ঝুলিতে পুরেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান, পেয়েছেন আকাশ সমান খ্যাতি । তবে আজ আমরা অঞ্জন দত্তের অভিনয় প্রতিভা বা গায়ক অঞ্জন দত্ত-- কোন টা নিয়েই আলোচনা করব না। আজ আমরা আলোচনা করব পরিচালক অঞ্জন দত্ত কে নিয়ে।


পরিচালক অঞ্জন দত্ত এ যাবৎ কালে সিনেমা বানিয়েছেন একুশ টির মত। এর মধ্যে ছয় টি সিনেমাই 'ব্যোমকেশ বক্সী' কে নিয়ে। ব্যোমকেশ কে নিয়ে বানানো প্রতিটি সিনেমাতেই উনি নিজের পরিচালনার দক্ষতা দেখিয়েছেন। কমবেশী সকলেই এই সিরিজের সিনেমা গুলো দেখেছেন। আজকের আলোচনায় আমরা 'ব্যোমকেশ বক্সী' পর্বের সিনেমা গুলো নিয়ে কোন আলোচনা করব না। আমার চোখে পরিচালক অঞ্জনের সেরা তিনটি সিনেমা নিয়েই থাকছে আজকের পর্ব ।

১. Dutta vs. Dutta(2012) ঃ 'দত্ত ভার্সেস দত্ত'  অঞ্জন দত্ত পরিচালিত দশম সিনেমা । সিনেমা টি তে যেমন অঞ্জন দত্তের পরিচালনার সুনিপুণতার দেখা মিলবে, তেমনি দেখা মিলবে উনার লেখনী ক্ষমতা আর অসাধারন অভিনয়। সিনেমাটি আবর্তিত হয়েছে দত্ত পরিবারের মানুষ ও এদের সাথে সুংশ্লিষ্ট মানুষদের নিয়ে, বিশেষ করে পিতা-পুত্রের মধ্যকার সম্পর্ক কে ঘিরে, যারা দুজন দুটি প্রজন্ম কে প্রতিনিধিত্ব করছে। পুরো সিনেমাটি গল্পের নায়ক রন'র জবানীতে উপস্থাপন করা হয়েছে (অঞ্জন দত্তের অধিকাংশ সিনেমাতেই এরকম দেখা যায়, যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে একজন সিনেমার গল্প টা বলে চলে, অর্থাৎ 'উত্তম পুরুষ'এ গল্প বলে চলা ) । এছাড়া গল্পে সময়ের বহমানতা, প্রেম ভালবাসা বা রাজনীতি--সবকিছুরই দেখা মিলবে। হয়ত কোন কিছুই চোখ ধাধিয়ে যাবে না, কিন্তু মনে গেঁথে থাকার মত একটা সিনেমা । 

২. Madly Bangalee (2009) ঃ এটি অঞ্জন দত্তের মিউজিক ঘরানার সিনেমা ।  সিনেমার মূল কাহিনী আবর্তিত হয়  পাঁচ টি ছেলের তৈরী 'ম্যাডলি বাঙ্গালী' নামক একটি ব্যান্ড দল, একটি গ্যারাজ, নায়িকা তানিয়া, কিছু পোড় খাওয়া হেরে যাওয়া মানুষ, মোদ্যকথা গান পাগল কিছু মানুষ কে ঘিরে । এই সিনেমাটিতেও দেখা মিলবে অঞ্জন দত্তের অসাধারন অভিনয় । সিনেমার বাকী সদস্যদের অভিনয়ও মন ভরিয়ে দেবার মত । আছে অঞ্জন পুত্র নীল দত্তের কম্পোজিশনে মন ভাল করার মত কিছু গান । বিশেষ করে অর্ক'র গাওয়া 'মাউলা' ও 'তানিয়া' গান দুটি একটু বেশীই ভাল । তাছাড়া সিনেমার সংলাপ গুলো রসালো, প্রাণবন্ত, যা কিনা পুরো সিনেমাটিকে এক অন্যরকম রূপ দান করে । আমার মতে এটা হল- 'ভাল না লেগে পারেই না' টাইপের সিনেমা।



৩. রঞ্জনা আমি আর আসবো না (২০১১) ঃ তিনটি জাতীয়
 চলচ্চিত্র পুরষ্কার পাওয়া (স্পেশাল জুরি এওয়ার্ড-পরিচালক অঞ্জন দত্ত, সেরা সংগীত পরিচালক- নীল দত্ত, সেরা বাংলা সিনেমা) সিনেমা 'রঞ্জনা আমি আর আসবো না' কে অঞ্জন দত্ত পরিচালিত সেরা সিনেমা বলা যেতেই পারে । এই সিনেমা দিয়ে পরিচালক অঞ্জন দত্ত প্রথম বারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান। সিনেমার প্রত্যেকের অভিনয় যেমন প্রশংসার দাবিদার, তেমনি এই সিনেমার প্রতিটি গানও সিনেমাটির জনপ্রিয়তার সমান অংশীদার। অঞ্জন দত্ত, পার্নো মিত্রর অসাধারন অভিনয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে সোমলতা, কবীর সুমন বা অঞ্জন দত্তের গান । খুব অল্প সময়ের জন্য কবীর সুমন এর উপস্থিতি এবং উনার গান সিনেমাটিতে যোগ করে এক ভিন্ন মাত্রা।  তবে সর্সাবোপরি সিনেমার প্রাণ ভোমরা কিন্তু অঞ্জন দত্তই ছিলেন। একি সাথে গল্প লেখা, গান লেখা, গান গাওয়া, পরিচালনা আর অসাধারন অভিনয়, এ যেন চন্ডী পাঠ থেকে জুতো সেলাই!


লেখকঃ দীপক কর্মকার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ